‘ব্যাক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ বলতে কী বোঝো ও এর গুরুত্ব আলোচনা করো । What is meant by ‘Declaration of Rights of the Individual and Citizen’ and discuss its importance.

অথবা, টীকা লেখো : ব্যাক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা । Class 9 Chapter 1 (Mark 4/5+3=8)

Notice :- নিচে এই নোটটির প্রত্যেটি পয়েন্ট আলোচনা করা হয়েছে , পরীক্ষায় যে অংশটুকু আসবে / যত নং এর আসবে কেবল সেই অংশটুকুর-ই উত্তর লিখবে, বাকি অংশটুকু লেখার কোনো প্রয়োজন নেই । 

উত্তর :-

ভূমিকা :-

ফরাসি জাতীয় সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুলাই সংবিধান সভায় রূপান্তরিত হয়। এই সভা বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধিদের সংখ্যাধিক্যে ১৭৮৯-১৭৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হল ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্র প্রকাশ। ঐতিহাসিক ওলার এই ঘোষণাপত্রকে ‘পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা’ বলে অভিহিত করেছেন।

ব্যাক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা

ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা :-

১) ঘোষণাপত্রের ভিত্তি :

এই ঘোষণাপত্রের মূল ভিত্তি ছিল আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, রুশো ও লকের দার্শনিক মতবাদ এবং ইংল্যান্ডের ম্যাগনা কার্টা ও বিল অফ রাইটস প্রভৃতি।

(১) স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার, (২) আইন জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন এবং আইনের চোখে সকল মানুষই সমান,  (৩) বাস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয় মানুষের সর্বজনীন অধিকার,  (৪) জনগণই রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী,  (৫) আইনের সাহায্য ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার বা কারাদণ্ড দেওয়া যাবে না।

৩) সীমাবদ্ধতা :

গুরুত্বপূর্ণ এই ঘোষণাপত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন এটিতে- (১) সামাজিক সাম্যের কথা বলা হয়নি, (২) অর্থনৈতিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, (৩) ফরাসিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ঘোষণাপত্রে কিছু উল্লেখ করা হয়নি, (৪) শিক্ষার অধিকার সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি, (৫) সংগঠিত অধিকার সম্পর্কে এই ঘোষণাপত্র নীরব।

ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব :-

১) স্বাধীনতার স্বীকৃতি :

উক্ত ঘোষণাপত্রে ফরাসি তথা বিশ্বমানবতার অধিকার ঘোষণা করে বলা হয় ‘স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার’। ফ্রান্সের মানুষ বাস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয়ের অধিকার লাভ করে।

এই ঘোষণাপত্র ফ্রান্সের পচনশীল পুরাতনতন্ত্র, স্বৈরাচারী দৈব রাজতন্ত্র, যাজকতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র প্রভৃতির পতন ঘোষণা করে। ঐতিহাসিক ওলারের কথায়-এই ঘোষণাপত্রটি ‘পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা’।

৩) জনগণের সার্বভৌমত্ব :

ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম লক্ষ্য জনগণের সার্বভৌমত্ব এই ঘোষণাপত্রের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ঘোষণাপত্রে ঘোষণা করা হয়েছিল ‘স্বৈরাচারী ও দৈব ক্ষমতার অধিকারী রাজা নন, দেশের জনগণই হল প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।’ ঐতিহাসিক লেফেভর এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লবের কালজয়ী আবেদনের সূত্রপাত ঘটে বলে উল্লেখ করেছেন।

উক্ত ঘোষণাপত্র ফ্রান্সের বাইরে বিভিন্ন দেশের মানুষকে মুক্তির পথ দেখায় এবং ইউরোপের বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের মনে নতুন আশার আলো সঞ্চার করে। লর্ড অ্যাক্টন বলেছেন, “এই ঘোষণাপত্রটি নেপোলিয়নের সমগ্র বাহিনীর চেয়েও শক্তিশালী ছিল।”

উপসংহার :-

বিপ্লবকালে ফরাসি সংবিধান সভা ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্র দ্বারা সেদেশের পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়ে নবযুগের সূত্রপাত ঘটায়। ফ্রান্স থেকে ক্রমশ ইউরোপ তথা সমগ্র বিশ্বে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে।


Note:- আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন. ধন্যবাদ


*অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ

সেপ্টেম্বর হত্যাকান্ড কাকে বলে
দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব কাকে বলে

Leave a comment