নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (Napoleon Bonapart) কীভাবে ফ্রান্সে ক্ষমতালাভ করেন?* (Class 9/Chapter 2)

অথবা, নেপোলিয়ন সম্পর্কে যা জানো লেখ ।* (Mark 4/8)

Notice :- নিচে এই নোটটির প্রত্যেটি পয়েন্ট আলোচনা করা হয়েছে , পরীক্ষায় যে অংশটুকু আসবে / যত নং এর আসবে কেবল সেই অংশটুকুর-ই উত্তর লিখবে, বাকি অংশটুকু লেখার কোনো প্রয়োজন নেই । 

উত্তর :-

ভূমিকা :-

কথায় আছে ব্যক্তি তার আপন প্রতিভা আপনিই রচনা করে। এমনই একজন ব্যক্তিত্ব হলেন যিনি আপন ব্যক্তিত্ব, কর্মপন্থা ও অপরিসীম সাহস ও শক্তি দ্বারা ইতিহাসের গতি পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি হলেন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। তাঁর আবির্ভাব এক যুগসন্ধিক্ষণে হয়েছিল। একদিকে যখন ফরাসি বিপ্লব শোচনীয় ব্যর্থতায় পর্যবসিত, অন্যদিকে ডাইরেক্টরি শাসনের অপদার্থতা ও বারংবার বৈদেশিক আক্রমণের সংকটময় পরিস্থিতিতে তাঁর আবির্ভাব ফ্রান্স তথা ফরাসিবাসীর কাছে ছিল এক অভূতপূর্ব ঘটনা। অতি সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও নিজ প্রতিভাবলে তিনি ফ্রান্সের সম্রাট পদ লাভ করেন। তাঁর এই উত্তরণ যেমন ছিল বিস্ময়কর, তেমনি অবিশ্বাস্য। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ফ্রান্সের ভাগ্যনিয়ন্তা ।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট

নেপোলিয়নের বাল্যজীবন :-

🔷 জন্ম :

নেপোলিয়ন ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ইটালির অন্তর্গত কর্সিকা দ্বীপের অ্যাজাক্কিও (Ajaccio) শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

🔷 পিতা-মাতা :

নেপোলিয়নের বাবার নাম কার্লো বোনাপার্ট ও মায়ের নাম লেটিজিয়া বোনাপার্ট।

🔷 শিক্ষালাভ :

মাত্র ষোলো বছর বয়সে দুর্ভাগ্যবশত নেপোলিয়ন পিতৃহীন হন। কঠোর দারিদ্র্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে তিনি বাস্তবের মুখোমুখি হতে থাকেন। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন মেধাবী। অঙ্ক, ইতিহাস, যুক্তিবিজ্ঞান ও ভূগোল এবং সমকালীন দার্শনিকদের রচনা ছিল তাঁর খুব প্রিয়। তবে তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা সংগঠনে একদিকে যেমন দার্শনিকদের দর্শনচিন্তা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল, তেমনি পর্বতসংকুল প্রাকৃতিক পরিবেশও কম প্রভাব ফেলেনি। তাঁর চরিত্রে ভাবপ্রবণতার সঙ্গে যুক্তিবাদের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল। ব্রিওনি ও প্যারিসের সামরিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা শেষ করে মাত্র সতেরো বছর বয়সে তিনি ফরাসি গোলন্দাজ বাহিনীর সাব-লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন।

নেপোলিয়নের উত্থানের সূচনা :-

নেপোলিয়নের উত্থানের কাহিনি ছিল রোমাঞ্চকর এবং এটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। যথা-

১) কর্সিকার স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা :

নেপোলিয়নের মাতৃভূমি কর্সিকা। এটি প্রথমে ইটালির জেনোয়ার অধীনস্থ ছিল। পরে তা ফ্রান্সের অধীনস্থ হয়। সুতরাং, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কর্সিকার স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলে তিনি এতে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ফরাসি বিপ্লব শুরু হলে কর্সিকাকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশের মর্যাদা দিলে তিনি ফরাসি বিদ্বেষ ত্যাগ করেন এবং ফরাসি নাগরিক হিসেবে বিপ্লবী ভাবধারার প্রতি আকৃষ্ট হন।

২) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদ লাভ :

বিপ্লবী আইনসভায় জিরন্ডিস্ট ও জ্যাকোবিনদের দ্বন্দ্বে তিনি জ্যাকোবিনদের পক্ষ অবলম্বন করেন। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংরেজ বাহিনীর হাত থেকে ফ্রান্সের তুলোঁ বন্দর রক্ষা করেন। এই অসাধারণ সামরিক কৃতিত্বের জন্য তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে উন্নীত হন।

৩) লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদ লাভ :

এর কিছুকাল পরে সন্দেহবশত নেপোলিয়নকে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে বিপ্লববিরোধী কোনো কাজের প্রমাণ না মেলায় তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং স্বপদে নিযুক্ত করা হয়। ওই সময়ে তিনি জনতার আক্রমণ (রাজতন্ত্রের সমর্থক ও প্রজাতন্ত্রবিরোধী উচ্ছৃঙ্খল জনতা) থেকে জাতীয় কনভেনশনকে রক্ষা করেন (৫ অক্টোবর, ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের)। এর পুরস্কারস্বরূপ তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদ লাভ করেন।

৪) নেপোলিয়নের ইটালি অভিযান :

ইতোমধ্যে ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ অক্টোবর ‘জাতীয় কনভেনশন’-এর কার্যকাল শেষ হয় এবং ডাইরেক্টরির শাসন (১৭৯৫-১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ) শুরু হয়। উক্ত পর্বে ফ্রান্সের অভ্যন্তরে এক চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আইনশৃঙ্খলা ভীষণভাবে ভেঙে পড়ে। বৈদেশিক ক্ষেত্রে তখন ফ্রান্সবিরোধী প্রথম শক্তিজোেট ভেঙে গেলেও ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও সার্ডিনিয়া তখনও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। নেপোলিয়ন এই শক্তিজোটের বিরুদ্ধে ইটালিতে যুদ্ধযাত্রা করেন। ইটালির যুদ্ধ জয়ই কুললক্ষ্মী তাঁর গলায় জয়মাল্য প্রদান করেন।

৫) সার্ডিনিয়া জয় :

নেপোলিয়ন ইটালিতে এক মাসের কম সময়ে পাঁচটি খন্ডযুদ্ধে সার্ডিনিয়াকে পরাজিত করেন। সার্ডিনিয়া সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হয় এবং এর ফলে স্যাভয় ও নিস তাঁর দখলে আসে।

শুধু তাই নয়, পার্মা, মডেনা এবং নেপলস-এর শাসকরাও তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

৬) অস্ট্রিয়ার পরাজয় স্বীকার ও ক্যাম্পো ফর্মিওর সন্ধি স্বাক্ষর :

নেপোলিয়ন উত্তর ইটালিতে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে লম্বার্ডি, ভেনিস ও মিলান দখল করেন অতঃপর তদানীন্তন অস্ট্রিয়ার সম্রাট ক্যাম্পো ফর্মিওর সন্ধি স্বাক্ষরে (১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দ) বাধ্য হন। ইটালি ও অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাফল্য ইউরোপে একদিকে যেমন ফ্রান্সের মর্যাদাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল, তেমনি তাঁর মর্যাদা ও গুরুত্ব সমধিক প্রচারিত হয়েছিল।

৭) ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মিশার আভিযান :

ইটালি ও অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব সাফল্যের পর নেপোলিয়ন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মিশর অভিযানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেখানে পিরামিডের যুদ্ধে (১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দ) জয়লাভ করলেও নীলনদের যুদ্ধে তিনি ইংরেজ সেনাপতি নেলসনের হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। তবে তাঁর পরাজয়ের সংবাদ পৌঁছোনোর আগেই তিনি ফ্রান্সে ফিরে আসেন এবং ফরাসিবাসীর কাছে বীরের সম্মান লাভ করেন।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সাম্রাজ্য

১) ডাইরেক্টরি শাসনের অবসান ও কনস্যুলেট শাসনব্যবস্থার সূচনা :

নেপোলিয়ন যখন নিজ যোগ্যতাবলে একের পর এক সাফল্যের মধ্য দিয়ে ফরাসি জনগণের মন জয় করতে সমর্থ হয়েছেন। সেই সময় ফরাসি জনগণ আবার ডাইরেক্টরি শাসনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ। আর এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন নেপোলিয়ন। তিনি সেনাবাহিনীর সাহায্যে ডাইরেক্টরি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ‘কনস্যুলেট’ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন (৯ নভেম্বর, ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের)।

নেপোলিয়নসহ আরও দু-জন কনসালের ওপর শাসনভার অর্পিত হলেও তিনিই ছিলেন সর্বেসর্বা।

ফ্রান্সের প্রথম কনসাল হিসেবে দেশের শাসনভার গ্রহণ করে নেপোলিয়ন ফ্রান্সবিরোধী দ্বিতীয় রাষ্ট্রজোটের আক্রমণ প্রতিহত করেন। এরপর তিনি একে একে ইটালি, জার্মানি ইত্যাদি দেশ দখল করে অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হন।

১) নেপোলিয়নের যুগ :

নেপোলিয়ন প্রথমে দশ বছরের জন্য ‘কনসাল’ পদে নিযুক্ত হলেও পরে সংবিধান সংশোধন করে সারা জীবনের জন্য ওই পদে নিযুক্ত হন।

২) গণভোট: ফরাসি জাতির সম্রাট পদে অভিষেক :

সবশেষে, ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে সিনেটের প্রস্তাব মতো গণভোটের মাধ্যমে তিনি ‘ফরাসি জাতির সম্রাট’ উপাধিতে ভূষিত হন।

মূল্যায়ন :-

এইভাবে বোনাপার্ট তৎকালীন ফ্রান্স তথা ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রণনিপুণ সেনাপতি হয়ে উঠেছিলেন। তিনি এক সাধারণ পরিবারের সন্তান হয়েও নিজ দক্ষতায় ফ্রান্সের শাসক হয়েছিলেন। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ফ্রান্সের ভাগ্যনিয়ন্ত্রা। তাই ঐতিহাসিকগণ তাঁর শাসনকালকে (১৭৯৯-১৮১৪ খ্রি.) ইউরোপের ইতিহাসে ‘নেপোলিয়নের যুগ’ (Age of Napoleon) বলে অভিহিত করেছেন।


‘বিপ্লবের সন্তান’ কে ছিলেন ?

উত্তর :- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন ‘বিপ্লবের সন্তান’ ।

নেপোলিয়ন কবে ডিরেক্টরি শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল ?

উত্তর :- নেপোলিয়ন ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ নভেম্বর ডিরেক্টরি শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল ।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কত খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করেন?

উত্তর :- নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের শাসনক্ষমতা দখল করেন।

নেপোলিয়ন প্রথমে কত বছরের জন্য কনসাল নিযুক্ত হন?

উত্তর :- নেপোলিয়ন প্রথমে ১০ বছরের জন্য কনসাল নিযুক্ত হন।

কত খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সংশোধন করে নেপোলিয়ন যাবজ্জীবনের জন্য কনসাল নিযুক্ত হন ?

উত্তর :- ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সংশোধন করে নেপোলিয়ন যাবজ্জীবনের জন্য কনসাল নিযুক্ত হন।

নেপোলিয়ন কত খ্রিস্টাব্দে নিজেকে ‘ফ্রান্সের সম্রাট’ বলে ঘোষণা করেন ?

উত্তর :- নেপোলিয়ন ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে ‘ফ্রান্সের সম্রাট’ বলে ঘোষণা করেন ।

ইতিহাসের কোন সময়কে ‘নেপোলিয়নের যুগ’ বলা হয় ?

উত্তর :- ইতিহাসে ১৭৯৯ থেকে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে ‘নেপোলিয়নের যুগ’ বলা হয় ।

‘আমিই বিপ্লব’ – উক্তিটি কার ?

উত্তর :- ‘আমিই বিপ্লব’ – এই উক্তিটি নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ।

কত খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়নের মৃত্যু হয় ?

উত্তর :- ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে নেপোলিয়নের মৃত্যু হয় ।

নেপোলিয়ন কোন দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন ?

উত্তর :- নেপোলিয়ন কর্সিকা দ্বীপের অ্যাজাক্কিও (Ajaccio) শহরে জন্মগ্রহণ করেন ।


Note:- আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন. ধন্যবাদ


*অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

ফরাসি বিপ্লবে নারীদের ভূমিকা বা অবদান আলোচনা করো
দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব কাকে বলে
ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব ফলাফল ব্যাখ্যা

Leave a comment