দৈব রাজতন্ত্র বলতে কী বোঝায় ? ফরাসি রাজতন্ত্র কি দৈব রাজতন্ত্র ছিল ।

উত্তর :-

দৈব রাজতন্ত্র :-

যে রাজতন্ত্রে রাজারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে মনে করতেন, ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাস করতেন এবং নিজেরা ইচ্ছানুসারে সীমাহীন স্বৈরতন্ত্রের মাধ্যমে দেশশাসন করতেন, তাকে ‘দৈব রাজতন্ত্র’ বলা হয়।

দৈব রাজতন্ত্র

ফরাসি রাজতন্ত্র :- ফ্রান্সের বুরবোঁ রাজতন্ত্রকে দৈব রাজতন্ত্র বলা যায়। কারণ-

১) রাজারা ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাসী :

ফ্রান্সের রাজারা ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতায় বিশ্বাস করতেন। ফরাসি প্রশাসনে জনগণের মতামতের কোনো মূল্য ছিল না। রাজা তাঁর কাজের জন্য কারোর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিলেন না।

ফ্রান্সের রাজারা নিজ ইচ্ছানুসারে স্বৈরাচারের মাধ্যমে দেশশাসন করতেন। তাঁরা ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ শাসক, আইনপ্রণেতা ও বিচারক । রাজাদের ইচ্ছায় ছিল আইন ।

  • সীমাহীন ক্ষমতার অধিকারী সম্রাট চতুর্দশ লুই (Louis XIV) বলেছিলেন, ‘আমিই রাষ্ট্র’ (I am the State)।
  • দাম্ভিক সম্রাট ষোড়শ লুই (Louis XVI) বলতেন, আমি যা ইচ্ছা করি তাই আইন’ (It is legal because I wish it) ।

বিরুদ্ধ মত :-

ফরাসি সম্রাট দৈবক্ষমতা দাবি করলেও বাস্তবে তাঁর ক্ষমতা ছিল সীমিত। কারণ রাজকীয় ক্ষমতার উপর ফ্রান্সের ১৩টি প্রাদেশিক সভা বা পার্লামেন্টের সীমাহীন প্রভাব ছিল। রাজা কোনো আদেশ জারি করলে সেই আদেশকে প্রাদেশিক সভার অনুমোদন পেতে হত। অনুমোদন না পেলে তা প্রদেশে কার্যকর হত না।

প্রাদেশিক সভার সদস্য যাজক ও অভিজাতরা বিরোধিতা করলে রাজা কিছু করতে পারতেন না। সে ক্ষেত্রে রাজকীয় আইনও কার্যকর করা যেত না। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ডেভিড থমসন (David Thomson) বলেছেন যে, ‘ফরাসি রাজতন্ত্র ছিল আসলে সামন্ত রাজতন্ত্র’ (The French monarchy was a feudal monarchy) ।


ফরাসি বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে কোন্ বংশ রাজত্ব করত? বিপ্লবের জন্য এই বংশ কীভাবে দায়ী ছিল ?

উত্তর :-

১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে বিপ্লবের সময় বুরবোঁ রাজবংশ রাজত্ব করত। ফরাসি বিপ্লবের জন্য মাঁদেলা প্রমুখ ঐতিহাসিক ফরাসি রাজতন্ত্রকেই দায়ী করেছেন। তাঁরা বুরবোঁ শাসকদের দুর্বলতা, অস্থির মনোভাব ও অদূরদর্শিতাকে এই বিপ্লবের মূল কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন।

ফ্রান্সের রাজবংশের শাসন

বুরবোঁ রাজতন্ত্রের দায়িত্ব :-

১) স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র :

চতুর্দশ লুই (Louis XIV) থেকে ষোড়শ লুই (Louis XVI) পর্যন্ত সকল বুরবোঁ বংশীয় শাসকই ছিলেন স্বৈরাচারী। এঁদের শাসনের কোনো গণভিত্তি ছিল না ।

রাজা চতুর্দশ লুই, পঞ্চদশ লুই প্রমুখ ছিলেন বিলাসী, অলস ও পরিশ্রমবিমুখ। শাসনকার্যে এঁদের দুর্বলতার সুযোগে রাজকর্মচারীরা দেশে যথেচ্ছাচার শুরু করেছিল।

3) প্রশাসনিক ত্রুটি :

বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে বুরবোঁ শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। ‘লেতর দ্য ক্যাশে’ (Lettres de cachet)-এর অপব্যবহার, ইনটেনডেন্ট (Intendent) নামক রাজস্ব আদায়কারীদের শোষণ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।

রাজন্যবর্গের যুদ্ধনীতি, বিলাসব্যসন, অমিতব্যয়িতা প্রভৃতির ফলে বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্স চরম অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়। সংকট থেকে মুক্তি পওয়ার জন্য রাজা ষোড়শ লুই তুর্গো, নেকার, ক্যালোন, ব্রিয়াঁ প্রমুখ অর্থমন্ত্রীর সাহায্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কিন্তু স্বার্থান্বেষী অভিজাতদের বিরোধিতার ফলে তাঁর সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করলে বিপ্লব অনিবার্য হয়ে ওঠে।

উপরোক্ত কারণগুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়- ফরাসি বিপ্লবের জন্য বুরবোঁ রাজবংশের নানাবিধ অযোগ্যতা অন্যতম কারণ হলেও একমাত্র কারণ নয়। সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতিগ্রস্ত চার্চ, স্বার্থান্বেষী অভিজাত শ্রেণি, বুর্জোয়া শ্রেণির বিপ্লবমনস্কতার সঙ্গে বুরবোঁ রাজবংশের ভূমিকা একত্রিত হয়ে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করেছিল।


Note:- আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন. ধন্যবাদ


*অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ

ব্যাক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা টীকা লেখো
সেপ্টেম্বর হত্যাকান্ড কাকে বলে

Leave a comment